
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে যন্ত্রের ওপর ভর করছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একটি অশুভ পার্টনারশিপ।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যাট বিশপ নামের একজন ইভিএম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। এই বিশেষজ্ঞ ইভিএমের বিভিন্ন ত্রুটি, আস্থার সংকট ও ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের অপকৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হঠাৎ কী কারণে, কাকে বিজয়ী করার উদ্দেশে এবং কার নির্দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন? দেশের জনগণ কোনোভাবে নির্বাচনে ইসির এই অপকৌশল বাস্তবায়ন হতে দেবে না। বিএনপি যেকোনো মূল্যে ইসির এই অপকৌশল প্রতিহত করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএমের মতো বিতর্কিত যন্ত্র কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তার প্রতিটি পয়সা কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের দায় হিসেবে গণ্য হবে। এই অপকর্মের সম্পূর্ণ দায় নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও অসৎ উদ্দেশে বিপুল অর্থ লোপাটের ষড়যন্ত্র দেশবাসী কোনোভাবে মেনে নেবে না।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএম-ডিভিএম কেনার উদ্যোগ ত্যাগ করুন। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা আর ঘনীভূত করবেন না। জনগণের কথা ভাবুন, এখনো সময় আছে। তা না হলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায় নিতে হবে। আমরা ইসিকে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ডিজিটাল জালিয়াতির পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায়, যড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এই অপকর্মের মূল্য দিতে হবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি নির্বাচন হবে, সেখানে বিএনপি যাক বা না যাক—এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার জনগণের সিদ্ধান্ত নয়, কারও কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে বিএনপির অবস্থান কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যতই ষড়যন্ত্র করুক, নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের সব অপকৌশল বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। কমিশন ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। এর জন্য আরপিও সংশোধন করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার দুরভিসন্ধিমূলক। এটি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ ছাড়া আর কিছু নয়।
ইভিএম কেনার ক্ষেত্রে অর্থ ‘লোপাটের’ অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০১০ সালে একটি ইভিএম কেনা হয়েছে ১০ হাজার টাকায়। এখন সেটি কেনা হচ্ছে ২০ গুণ বেশি দামে ২ লাখ ৫ হাজার টাকার বেশি মূল্যে। মূলত এটি জনগণের অর্থ লোপাটের একটি প্রক্রিয়া। কারণ, সরকার ইসিকে সুযোগ করে দিয়েছে।
ইভিএম সম্পর্কে বিএনপির মনোভাবের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার কথা বলে আসছে। কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সময়ও বিএনপি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলে মত দিয়েছে। তখন কমিশনও বলেছে, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ করেই কার নির্দেশে ইসি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ও ডিভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে? মূলত, এটি ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসানোর অপকৌশল।
মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পদ্ধতি চালু নেই। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, ইভিএমের ভোটপদ্ধতিতে নির্বাচনে জালিয়াতি সম্ভব। এটি সহজেই হ্যাক করা যায়।
নির্বাচন কমিশন সচিবের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আর নির্বাচন কমিশন বলতে কিছু নেই। আছেন শুধু একজন সচিব। যা বলার কমিশন সচিব হেলালুদ্দীনই বলেন।
দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া, ভোটের আগে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা, ভোট জালিয়াতি এরই মাঝে দৃশ্যমান। কিন্তু নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে নির্বাচনের আর কোনো অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মইন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :
[প্রিয় পাঠক, আপনিও এফ টিভি নিউজ অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, রাজনীতি, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-ftvnewsbd@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
Recent Post