
একজন খলবলিয়ে হাসছে। একজন এক পা-দুই পা করে টলোমলো পায়ে হাঁটছে। দুই বোন খুনসুটি করছে। ইশারা-ইঙ্গিতে, মুখে নানান শব্দ করে বাবার সঙ্গে গল্পও করছে। কে বলবে, তাদের ছোট শরীরের বেশির ভাগ জায়গায়ই কাটাছেঁড়া করা। এই দুই বোন হলো তোফা ও তহুরা। পিঠ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে জন্মেছিল তারা। ১০ মাস বয়স পর্যন্ত এভাবেই ছিল। এখন তারা দুজনই আলাদা মানুষ।
অস্ত্রোপচার করে আলাদা করার পর গত বছরের ২ আগস্ট প্রথম আলোতে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০-২২ জন চিকিৎসক প্রায় ৯ ঘণ্টা সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের পৃথক করেন।
তোফা ও তহুরার মা-বাবা, চিকিৎসকসহ সবার মুখেই এই সাফল্যের হাসি এখন পর্যন্ত লেগে আছে। তবে আলাদা করার অস্ত্রোপচার সফল হলেও পর্যায়ক্রমে আরও কিছু অস্ত্রোপচার তাদের লাগবে। নিয়মিতই চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বলতে গেলে তাদের বাড়িঘরে পরিণত হয়েছে। গাইবান্ধা থেকে তাদের মা-বাবা এবার হাসপাতালে এসেছেন এক মাসের বেশি সময় আগে। ঈদের আগে বাড়ি ফিরবেন, ঈদের পর মেয়েদের নিয়ে আবার আসবেন হাসপাতালে। জন্মের পর থেকেই হাসপাতালটির শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক সাহনূর ইসলামের তত্ত্বাবধানে তারা বড় হচ্ছে। এখন তাদের বয়স হয়েছে ২৩ মাস।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান আশরাফ উল হক প্রথম আলোকে বলেন, জটিলতা থাকায় জন্মের কয়েক দিন পরই হাসপাতালে আনা হলে তাদের দুই বোনের পেটের মধ্যে কৃত্রিম পায়খানার রাস্তা করে দেওয়া হয়েছিল। তারা এখন পর্যন্ত কৃত্রিম পায়খানার রাস্তা দিয়েই পায়খানা করছে। ৪ আগস্ট অস্ত্রোপচার করে তোফার পায়খানার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তবে তহুরার জটিলতা একটু বেশি থাকায় তার পায়খানার রাস্তা তৈরি করা হবে পবিত্র ঈদুল আজহার পর।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, তোফা ও তহুরার বাবা মো. রাজু দুই মেয়েকে নিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন। মাঝেমধ্যে একজনও কোল থেকে নামবে না বলে জেদ করছে। আবার একজনকে ধরতে গেলে আরেকজন হাত থেকে বের হয়ে টলোমলো পায়ে হাঁটা দেয়। ‘কাকে রেখে কাকে ধরবেন’ অবস্থা।
মেয়েরা কেমন আছে, জানতে চাইলে তাদের মা শাহিদা হাসিমুখে বললেন, মেয়েরা ভালোই আছে। আর পাশ থেকে বাবা মো. রাজুর মেয়েদের নিয়ে গল্প শেষই হচ্ছিল না। মেয়েরা হাসে, মেয়েরা মা-বাবা ডাকতে পারে, এ ধরনের নানান গল্প বলছিলেন হাসিমুখে। একটু পরেই খানিকটা ম্লানমুখে জানালেন, মেয়েরা বড় হচ্ছে, খরচ বাড়ছে। কিন্তু গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কোনো কাজই করতে পারছেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তোফা ও তহুরার চিকিৎসা হচ্ছে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে। তারা বাড়ি গেলেও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন। তাদের বাবার জন্য উপযোগী একটি চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিষয়টি সবার নজরে আছে।
তোফা ও তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’। বাংলাদেশে পাইগোপেগাস শিশু আলাদা করার ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে অন্যান্য হাসপাতালে অন্য ধরনের জোড়া লাগানো শিশুদের অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
[প্রিয় পাঠক, আপনিও এফ টিভি নিউজ অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, রাজনীতি, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-ftvnewsbd@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
Recent Post